মেট্রোরেলে রিচার্জ সুবিধা অনলাইনে চালু করতে বাধা কোথায়
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৫, ১০:৫০ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

ঢাকায় গণপরিবহন হিসেবে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মেট্রোরেল। দুই বছর আগে চালু হওয়া মেট্রোরেলের দৈনিক যাত্রী সংখ্যা এখন ৪ লাখ ছাড়িয়েছে। কিন্তু এখনো টিকিট বা পাসের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। স্থায়ী পাসে টাকা শেষ হয়ে গেলে নতুন করে টাকা রিচার্জ এখনো স্টেশনে গিয়ে লাইন দিতে হয়। অথচ বিশ্বের অনেক দেশেই ঘরে বসে টাকা রিচার্জ করা যাচ্ছে।
টিকিট সরবরাহ বৃদ্ধি ও ঘন ঘন ট্রেন পরিচালনা করা গেলে যাত্রী আরও বাড়বে বলে মনে করেন মেট্রোরেল পরিচালনায় সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ঘরে বসে স্থায়ী র্যাপিড বা এমআরটি পাস রিচার্জ করা গেলে যাত্রীদের দুর্ভোগও কমে যাবে।
তাহলে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমানোর উদ্যোগ নিতে সমস্যা কোথায়? বা কেন নেওয়া হচ্ছে না? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, টিকিট সরবরাহ ও রিচার্জ সহজীকরণ বিষয়টি সরকারি দপ্তরের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়েছে।
মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। কিন্তু স্থায়ী বা র্যাপিড পাস সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। স্থায়ী পাসের রিচার্জ আরও সহজ করার কাজটিও ডিটিসিএর হাতে রয়েছে। ফলে দুই সংস্থার ঠেলাঠেলিতে দুই বছরেও টিকিট কাটা ও রিচার্জ সহজ করা যায়নি।
দীর্ঘদিন ধরেই ডিএমটিসিএলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন সরকারের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। গত মাসের শেষের দিকে মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনায় আন্তর্জাতিকভাবে বিশেষজ্ঞ ফারুক আহমেদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, দক্ষ লোকবলের সংকট দেখিয়ে এত দিন মেট্রোরেলের সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। অবশ্য কর্তৃপক্ষের এমনও ধারণা ছিল যে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী পরিবহন না করলে মেট্রোরেলে লোকসান হবে।
ট্রেন বাড়ালে যাত্রী ঠাসাঠাসি করে যাবে না। কিন্তু এখন যে ব্যস্ত সময়ে ঠাসাঠাসির কারণে অনেক যাত্রী ট্রেনে উঠতে পারেন না, এটা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। আসলে মেট্রোরেল প্রকল্প নেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এই সেবা চলমান থাকবে। পূর্ণ সক্ষমতায় প্রতি সাড়ে তিন মিনিট পরপর ট্রেন চলার কথা। এভাবে চললে ঘণ্টায় ৬০ হাজার এবং দিনে ৫ লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। অন্যদিকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল সম্প্রসারণের কাজ চলছে। সেটা হলে দৈনিক ৬ লাখ ৭৭ হাজার যাত্রী পরিবহন করা যাবে।
এমআরটি বা র্যাপিড পাসে যাতায়াত করলে ১০ শতাংশ ছাড় পাওয়া যায়। বর্তমানে মেট্রোরেলের ৫৫ শতাংশ যাত্রী র্যাপিড বা এমআরটি কার্ডে যাতায়াত করেন। বাকি ৪৫ শতাংশ যাত্রী ব্যবহার করেন একক যাত্রার কার্ড। দুই ধরনের কার্ডেরই সংকট আছে।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ এখন প্রতিদিন এক হাজার থেকে দেড় হাজার কার্ড বিক্রি করে থাকে। এদিকে একক যাত্রার কার্ডও এখন আর মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ কিনছে না। কিআউআর কোডসংবলিত কাগজের টিকিট চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। এটিও চালু হয়নি। ফলে কার্ডের সংকট থেকেই যাচ্ছে।
ভারত, হংকংসহ অনেক দেশেই ব্যাংকের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড মেট্রোরেলের পাস হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি।
ঘরে বসে রিচার্জ করার একটা উদ্যোগ ডিটিসিএ নিয়েছে। তবে এটি কবে কার্যকর করা যাবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এ ছাড়া ডিটিসিএর বর্তমান উদ্যোগ কার্যকর হলেও সব যাত্রীর পক্ষে এর পুরো সুবিধা নেওয়া সম্ভব হবে না।
জাইকার সহযোগিতায় ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ক্লিয়ারিং হাউস ফর ইন্টিগ্রেটিং ট্রান্সপোর্ট টিকিটিং সিস্টেম ইন ঢাকা সিটি অ্যান্ড অ্যাডজাসেন্ট ডিস্ট্রিক্ট’ শীর্ষক প্রকল্প রয়েছে ডিটিসিএর। এটি সংক্ষেপে ‘ক্লিয়ারিং হাউস’ নামে পরিচিত। প্রকল্পের অধীনেই অনলাইনে র্যাপিড পাস রিচার্জ করার নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ডিটিসিএ কর্মকর্তারা বলছেন, অনলাইন রিচার্জ চালু হলে মুঠোফোনে বিকাশ, রকেট ও নগদসহ অন্যান্য ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে র্যাপিড পাসের টাকা ভরা যাবে। তবে এর জন্য মুঠোফোনে নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন (এএফসি) সুবিধা থাকতে হবে।
এখন মেট্রোরেলের সংখ্যা বাড়ানো, টিকিট প্রাপ্তি সহজ করা এবং র্যাপিড ও এমআরটি পাসে টাকা ভরার কাজটি ঘরে বসে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যথাযথ উদ্যোগ না নিলে ঢাকার মেট্রোরেল যাত্রীরা বঞ্চিতই থেকে যাবেন আন্তর্জাতিক মানের সেবা থেকে।
আমার বার্তা/জেএইচ