৮৬ লাখ টাকা পাচারের তথ্য মিলেছে সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরানের বিরুদ্ধে
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৭:২৮ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অন্তত ১৩৩ কোটি টাকা অর্জন করেছেন, যার মধ্যে ৮৬ লাখ টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডি জানায়, দেশীয় গরু ছাগলকে ‘বিদেশি ও বংশীয়’ বলে প্রচারণা চালিয়ে কোরবানির বাজার থেকে সাদিক অ্যাগ্রোর অবৈধভাবে আয় ১২১ কোটি টাকারও বেশি।
সোমবার (৩ মার্চ) বিকেলে ঢাকার মালিবাগ থেকে ইমরান হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর প্রাপ্ত তথ্যের বিষয়ে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) বিকেলে ঢাকার মালিবাগে সিআইডি প্রধান কার্যালয়ে এ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. একরামুল হাবীব এসব তথ্য জানান।
মো. একরামুল হাবীব বলেন, সোমবার ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় ইমরান ও তার ব্যাবসায়িক অংশীদার তৌহিদুল আলম জেনিথসহ এই চক্রের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। তারা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে ১৩৩ কোটি ৫৫ লাখ ৬ হাজার ৩৪৪ টাকা অর্থ অর্জন করেছে বলে প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধানে জানা গেছে। প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অনুমোদনহীন ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি ও সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে বিদেশে প্রায় ৮৬ লাখ টাকা পাচার করেছে।
তিনি আরও বলেন, ইমরান ও তার সহযোগীরা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে গরু ও মহিষ বাংলাদেশে নিয়ে এসে তা বিক্রি করতেন। এছাড়া ভুটান ও নেপাল থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে ছোট আকৃতির ভুট্টি গরু বাংলাদেশে এনে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। ইমরান প্রতারণার মাধ্যমে দেশীয় গরু-ছাগলকে বিদেশি ও বংশীয় গরু-ছাগল বলে প্রচার করে উচ্চমূল্যে কোরবানির পশুর হাটে বিক্রি করে প্রায় ১২১ কোটি ৩২ লাখ ১৫ হাজার ১৪৪ টাকা আয় করে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রুপান্তর করেছেন।
তিনি আরও বলেন, গত বছর ঈদুল আজহার আগে কোটি টাকার দামের ‘বংশ মর্যাদাসম্পন্ন গরু’ ও ছাগলের দাম ১৫ লাখ টাকা চাওয়ার ঘটনায় শুরু হয় সমালোচনা। সেই ছাগল ১২ লাখ টাকায় কেনার চুক্তি করেন মুশফিকুর রহমান ইফাত নামে ১৯ বছর বয়সী এক তরুণ। ১৯ বছরের তরুণ মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১২ লাখ টাকায় ছাগল কেনার চুক্তির পর তার বাবা এনবিআর সদস্য মতিউর রহমান ও তার পরিবারের বিপুল সম্পদের তথ্য আসে গণমাধ্যমে। এরপর সাদিক অ্যাগ্রোর নানা অনিয়মের বিষয়েও প্রতিবেদন প্রকাশ হয় সংবাদমাধ্যমে।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, অবৈধভাবে অর্জিত মোট ১১ কোটি ৩৬ লাখ ৯১ হাজার ২০০ টাকা ইমরান ও তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জালালাবাদ মেটাল লিমিটেডের নামে এফডিআর খুলে বিনিয়োগ করে লন্ডারকৃত সম্পদে রূপান্তর করেছেন। এছাড়া মোহাম্মদপুরের এলাকায় সরকারি খাল ভরাট ও দখল করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।
তিনি আরও বলেন, বিদেশ থেকে আনা ব্রাহমা জাতের ১৫টি গরু ঢাকা কাস্টমস হাউজ আটক করেছিল। পরে সেগুলো সাভারে কৃত্রিম গরু প্রজনন কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। পরে প্রজনন কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া হলো, এ গরুগুলো জবাই করে তিনি ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করে দেবেন। কিন্তু এগুলো জবাই না করেই ইমরান জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজ তৈরি করেছেন জবাই করেছেন। এরপর সেগুলো প্রায় ১১ কোটি টাকা মূল্যে বিক্রি করেছেন।
ইমরানের সঙ্গে কোনো সরকারি কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ থাকলে সেটি দুদক তদন্ত করবে। এ মুহূর্তে তদন্তের স্বার্থে সবগুলো বিষয় প্রকাশ করা সমীচীন হবে না।
টেকনাফ এবং উখিয়া অঞ্চল থেকে মিয়ানমার থেকে গরু আমদানির প্রক্রিয়ার সঙ্গে অন্য কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জড়িত এমন ধারণা থেকে তদন্ত চলমান রাখার কথা জানিয়েছেন তিনি।
তদন্ত শেষে আরও বিস্তারিত জানানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওনি যে লন্ডারিং করেছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে অবৈধ লেনদেনের তথ্য, তদন্তের স্বার্থে ওই বিষয়গুলো একটু গোপন রাখতে হচ্ছে। টাকাগুলার উৎস, রিপ্লেসমেন্ট এবং লেয়ারিং হয়েছে তাতে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে তিনি মানিলন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত।
সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন, মোহাম্মদপুরে সরকারি খাল ভরাট করে সেখানে অবৈধভাবে ব্যবসা করেছেন। তাছাড়া প্রচুর অস্থাবর সম্পত্তির প্রমাণ পাওয়া গেছে। আরও বেশকিছু সম্পদ যেগুলো আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি।
বিদেশে পাচার করা টাকার মধ্যে থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইমরানের সহযোগী জেনিথ এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। আমরা অভিযান চালাচ্ছি। আমরা আরও ৫-৭ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক তথ্য পেয়েছি। তাদের গ্রেপ্তারে সুস্পষ্ট তথ্য প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
আমার বার্তা/এমই