চীনের কাছ থেকে দুটি নতুন জাহাজ পাচ্ছে বিএসসি

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৩ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

চলতি বছর চীনের কাছ থেকে দুটি নতুন জাহাজ পাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। এরমধ্যে প্রথম জাহাজ ‘বাংলার প্রগতি’ ২৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে বিএসসির বহরে যুক্ত হচ্ছে, আর দ্বিতীয় জাহাজ ‘বাংলার নবযাত্রা’ যুক্ত হবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। তবে জাহাজ বুঝে পাওয়ার আগেই বাংলার প্রগতি এরই মধ্যে ২২ কোটি টাকায় তিন মাসের জন্য ভাড়ায় দেয়া হয়েছে। এই জাহাজটি প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার মার্কিন ডলার আয় করবে, যা রাষ্ট্রীয় আয়ের ক্ষেত্রে বড় একটি সংযোজন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের কেনা নতুন জাহাজ ‘বাংলার প্রগতি’ বর্তমানে ট্রায়ালে রয়েছে চীনের জিংজিয়াং প্রদেশের বিখ্যাত জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নানইয়াংয়ের ইয়ার্ডে। ২০ অক্টোবর লন্ডনে বিএসসির কাছে জাহাজটির বাই পেপার হস্তান্তর করা হলেও, সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পর ২৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে জাহাজটি বুঝে পাবে বিএসসি। সেদিন থেকেই এটি প্রতিদিন ২০ হাজার মার্কিন ডলার ভাড়ায় বাণিজ্যিক কাজে নিযুক্ত হবে।
 
একইভাবে, ‘বাংলার নবযাত্রা’ জাহাজটিও আগামী ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কার্গো পণ্য পরিবহনের কাজে যুক্ত হবে বলে জানা গেছে। বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, ‘বাংলার নবযাত্রা জাহাজটি ডেলিভারি হওয়ার এক-দুই দিনের মধ্যেই বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যুক্ত হবে। আর প্রথম জাহাজটি প্রতিদিন ২০ হাজার মার্কিন ডলারে তিন মাসের জন্য ভাড়ায় দেয়া হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ভাড়াও আরও বাড়তে পারে।’
 
একসময় বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের বহরে ছিল ৩৮টি জাহাজ। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই সংখ্যা এখন নেমে এসেছে মাত্র পাঁচটিতে। নতুন যুক্ত হওয়া ‘বাংলার প্রগতি’ ও ‘বাংলার নবযাত্রা’ যোগ হলে বহরের জাহাজ সংখ্যা দাঁড়াবে সাতটিতে। তবে এর কোনোটিই বর্তমানে পণ্য নিয়ে বাংলাদেশের জলসীমা বা চট্টগ্রাম বন্দরে আসছে না। শিপিং বিশেষজ্ঞদের মতে, বিএসসির এসব জাহাজ যদি দেশের আমদানি পণ্য পরিবহনে যুক্ত করা যেত, তাহলে একদিকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হতো, অন্যদিকে প্রতি ট্রিপে দিনের আয়ের হিসাব ৩০ হাজার মার্কিন ডলারেরও বেশি হতো।
 
এইচআর শিপ ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কার্গোর কার্যক্রম গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। নির্দিষ্ট কাজের উপযোগী করে জাহাজগুলোকে প্রস্তুত করতে হবে।’
 
সবশেষ ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে চীন সরকারের ১ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তায় ৩টি করে মোট ৬টি জাহাজ কিনেছিলো বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। প্রথমবারের মতো নিজেদের টাকায় নতুন কেনা ১৯৯ মিটার দীর্ঘ, ৩৩ মিটার প্রস্থ এবং ১৮ মিটার গভীরতার বাংলার প্রগতি ও বাংলার নবযাত্রা ৬৫ হাজার মেট্রিক টন করে পণ্য বহন করতে সক্ষম।
 
চট্টগ্রাম নৌ-বাণিজ্য অধিদফতরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন শেখ মো. জালাল উদ্দিন গাজী জানান, এই জাহাজগুলোর ডিজাইন তৈরি করা হয়েছে আধুনিক বাও ও ব্রিজ ডিজাইন-অ্যারোডাইনামিক কাঠামোর ভিত্তিতে। এতে জাহাজের গতি ও জ্বালানি দক্ষতা দুই দিকেই উল্লেখযোগ্য সুবিধা মিলবে।
 
চীনের সহায়তায় নির্মিত নতুন দুটি জাহাজ ‘বাংলার প্রগতি’ ও ‘বাংলার নবযাত্রা’ কিনতে বিএসসির ব্যয় হয়েছে ৯৩৫ কোটি টাকা। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এই বাল্ক ক্যারিয়ার দুটি অন্তত ২০ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে সক্ষম হবে বলে আশা করছে সংস্থাটি। আর প্রতিবছর এই দুটি জাহাজ ভাড়া দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি অন্তত ২০০ কোটি টাকা লাভের আশা করছে।

আমার বার্তা/এল/এমই