ইউজিসি বদলে হবে উচ্চশিক্ষা কমিশন, গুরুত্ব পাবে বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং

প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:২৯ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

পরিবর্তনের পথে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বদলে হবে উচ্চশিক্ষা কমিশন যা প্রতি তিন বছর পরপর প্রকাশ করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং। এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশের পর, সংশ্লিষ্টদের মতামত চাওয়া হয়েছে।

‘বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষা কমিশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ চূড়ান্ত হলে ১৯৭৩ সালের ‘দ্য ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন অব বাংলাদেশ অর্ডার’ রহিত হবে।

অধ্যাদেশের খসড়া অনুযায়ী, উচ্চশিক্ষা কমিশন প্রতি তিন বছর পরপর দেশের অনুমোদিত সব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে র‌্যাংকিং প্রকাশ করবে। র‌্যাংকিং নির্ধারণের জন্য উপযুক্ত মানদণ্ড নিরূপণ করবে কমিশন। ওই মানদণ্ডের ভিত্তিতে র‌্যাংকিং নির্ধারণ করে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করবে। এছাড়া মানোন্নয়নের জন্য র‌্যাংকিংয়ের নিচের সারিতে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তদারকির আওতায় আনবে।

বাংলাদেশে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইউজিসি এক্ষেত্রে শুধু পরামর্শ দিতে পারে। তবে উচ্চশিক্ষা কমিশন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা, গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে দেবে। এ কমিশন থেকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন বিভাগ, অনুষদ, ইনস্টিটিউট, প্রোগ্রাম বা কোর্স চালু করার জন্য শর্তও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।

খসড়া অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, চেয়ারম্যানসহ কমিশন ৯ সদস্যের। সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে। উচ্চশিক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মন্ত্রী পদমর্যাদার এবং কমিশনারদের পদমর্যাদা হবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতির সমমান।

জানা গেছে, অধ্যাদেশে ইউজিসির চেয়ে উচ্চশিক্ষা কমিশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে। কমিশনের কোনো সুপারিশ বা নির্দেশ যুক্তিসংগত সময়ে অনুসরণ ও প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ অর্থ স্থগিত করতে পারবে কমিশন। পাশাপাশি ব্যর্থতার কারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যেকোনো প্রোগ্রাম বা কোর্সের অনুমোদন বাতিল, স্থগিত বা শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করাসহ উপযুক্ত নির্দেশনা দিতে পারবে।

উচ্চশিক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে গঠন করা হবে সার্চ কমিটি। তিন সদস্যের এই কমিটির প্রধান হবেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি অথবা আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। তার সঙ্গে থাকবেন ইউজিসির প্রাক্তন একজন চেয়ারম্যান ও জাতীয় অধ্যাপকদের একজন। সার্চ কমিটি প্রতিটি পদের বিপরীতে ন্যূনতম দুজনের নাম সুপারিশ করবে। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি উচ্চশিক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ দেবেন।

বিদ্যমান অধ্যাদেশে ইউজিসির চেয়ারম্যানসহ পূর্ণকালীন সদস্য হন সর্বোচ্চ পাঁচজন। পাশাপাশি ৯ জন খণ্ডকালীন সদস্য থাকেন। উচ্চশিক্ষা কমিশনে খণ্ডকালীন সদস্য থাকবেন ১০ জন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অধ্যাদেশে বলা আছে, হাইকোর্টের বিচারপতিকে যেসব কারণ ও পদ্ধতিতে অপসারণ করা যায়, ইউজিসির চেয়ারম্যানকেও একইভাবে অপসারণ করা যাবে। আর সরকার ইউজিসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করে পূর্ণকালীন সদস্যদের অপসারণ করতে পারবে।

তবে নতুন অধ্যাদেশের খসড়া অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি যেসব কারণ ও পদ্ধতিতে অপসারিত হন, তেমন কারণ ও পদ্ধতি ছাড়া উচ্চশিক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এবং কমিশনারদের অপসারণ করা যাবে না। অর্থাৎ, গুরুতর অসদাচরণ কিংবা দায়িত্ব পালনে অসমর্থতার প্রমাণ পেলেই কেবল রাষ্ট্রপতি উচ্চশিক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অপসারণ করতে পারবেন।

গত ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে উচ্চশিক্ষা কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করা হয়। আগামী ৩০ কার্যদিবস এ বিষয়ে মতামত জানানো যাবে।

এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজ আলিফ রুদাবা বলেন, ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম তদারকি করে। কাজটি আরও ভালোভাবে করার জন্য উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠন করা হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের যে খসড়া প্রস্তুত হয়েছে, তার ওপর এখন মতামত নেওয়া হচ্ছে। খসড়া নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় ও কর্মশালা হবে। এরপর খসড়াটির আইনি বিষয়গুলো দেখার পর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তোলা হবে। তিনি বলেন, এখন সংসদ নেই। তাই এটি অধ্যাদেশ আকারে প্রণয়ন হবে। সংসদ গঠন হয়ে গেলে সেটি আইন আকারে পাস হবে।

অধ্যাদেশের খসড়া অনুযায়ী, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, পদোন্নতি, পদোন্নয়ন ও চাকরি-সংক্রান্ত অভিন্ন বিধিমালা ও অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করবে উচ্চশিক্ষা কমিশন। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি-সংক্রান্ত অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করবে।


আমার বার্তা/এমই