লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:০৪ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বিকেল ৩টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় লাখো মানুষ জানাজায় শরিক হন।
জানাজা নামাজে ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি মো. আব্দুল মালেক।
এর আগে আজ বুধবার দুপুর ১২টার একটু পর কফিনবাহী জাতীয় পতাকায় মোড়ানো গাড়ি সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রবেশ করে।
তার আগে সকাল ১১টার দিকে গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বরের তারেক রহমানের বাসা থেকে মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স যাত্রা করে। তারও আগে সকাল ৯টা ১৭ মিনিটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় খালেদা জিয়ার মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স তারেক রহমানের বাসায় পৌঁছায়।
জানাজা শেষে খালেদা জিয়াকে দাফন করা হচ্ছে তার স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে। বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজ ঢাকায় আসেন ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি।
খালেদা জিয়ার জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা ও তিন বাহিনীর প্রধান
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার পাশে ছিলেন তিন বাহিনীর প্রধানসহ অন্যান্যরা।
খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন কার্যক্রম ঘিরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল, জাতীয় সংসদ ভবন ও জিয়া উদ্যান এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
আজ বুধবার বিজিবির সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক খুদেবার্তায় বলা হয়, রাত থেকে এভারকেয়ার হাসপাতাল, সংসদ ভবন ও জিয়া উদ্যান এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া পুরো এলাকার নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন।
মায়ের কফিনের পাশে বসে কোরআন তিলাওয়াত করেন তারেক রহমান
বুধবার সকালে গুলশান অ্যাভিনিউয়ে ১৯৬ নম্বর বাসায় নেওয়া হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মরদেহ। সেখানে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান বিএনপির নেতাকর্মী ও স্বজনেরা।
সেখানে মা খালেদা জিয়ার কফিনের পাশে বসে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে ভারতের শোকবার্তা দিয়েছেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এ সময় তিনি ভারতের শোকবার্তা তারেক রহমানের কাছে হস্তান্তর করেন। আজ বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এই তথ্য জানানো হয়।
পোস্টে বলা হয়, খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে শোকবার্তা পাঠিয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে তারেক রহমানের হাতে এই শোকবার্তা হস্তান্তর করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
তারেক রহমানকে সহমর্মিতা জানান পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে সহমর্মিতা জানিয়েছেন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক। আজ বুধবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এই তথ্য জানানো হয়।
কখনও কোনো আসনে হারেননি খালেদা জিয়া
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ১৯৮১ সালের মে মাসে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে যখন হত্যা করা হয়, খালেদা জিয়া তখন নিতান্তই একজন গৃহবধূ। রাজনীতি নিয়ে চিন্তাধারা তো দূরের কথা, রাজনৈতিক কোনো অনুষ্ঠানেও তাকে খুব একটা দেখা যেত না। সময়ের পরিক্রমায় সেই তিনিই একজন গৃহবধূ থেকে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে হয়েছেন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। ঘরে-বাইরে নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে তাকে এই দীর্ঘ বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। স্বামী হারানোর বেদনার মধ্যে তার গড়া দলের হাল ধরতে হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। সেখানেও অনেক প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়েছে তাকে। সেখান থেকে শুরু হয় রাজনৈতিক সংগ্রামের জীবন। বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী তিনি। ফেনী, বগুড়া, ঢাকা, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, খুলনা—যেখানেই নির্বাচন করেছেন, সেখানেই তিনি বিজয়ী হয়েছেন। দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে খালেদা জিয়াই একমাত্র উদাহরণ, যিনি ৫টি সংসদ নির্বাচনে ২৩টি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রতিটিতে বিজয়ী হয়েছেন।
ভোটে হারের গল্প খালেদা জিয়ার নির্বাচনী ইতিহাসে নেই। যদি নির্বাচন জনপ্রিয়তার মান নির্ধারণ করে, তাহলে তিনি সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছেন। এমনকি যেসব নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারেনি, সেসব নির্বাচনেও তিনি যতটি আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন, তার সব কটিতে জয়ী হন। বাংলাদেশে বা উপমহাদেশে তার সমমর্যাদার অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতা এ ধরনের কৃতিত্ব দেখাতে পারেননি।
‘আপসহীন’ নেত্রীর খেতাব পান খালেদা জিয়া
ঘরে-বাইরে নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে তাকে দীর্ঘ বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। স্বামী হারানোর বেদনার মধ্যে বিএনপির হাল ধরতে হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। সেখানেও অনেক প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয় তাকে। শুরু হয় রাজনৈতিক সংগ্রামের জীবন। টানা আট বছর রাজপথে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন খালেদা জিয়া। একসময় পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। কখনো আপস করেননি বলে তাকে আপসহীন নেত্রীর উপাধি দেওয়া হয়। দৃঢ় মনোবলের কারণে, দেশপ্রেমের কারণে, গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে দেশের মানুষ তাকে ছেড়ে যায়নি।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ‘আপসহীন নেত্রী’ অভিধা পাওয়া খালেদা জিয়া বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন ৪১ বছর। তিনি পাঁচবারের সংসদ সদস্য, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী; আর বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন দুইবার।
শেষ সময়ে হাসপাতালই হয়ে উঠেছিল ‘বাসস্থান’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জীবনের শেষ সময়টা কেটেছে হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যায়। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এক মাসের বেশি সময় তিনি হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ছিলেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন নির্বাহী আদেশে কারামুক্তি পান অসুস্থ খালেদা জিয়া। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৭ জানুয়ারি তাকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে নেওয়া হয়। সেখানে ১১৭ দিন অবস্থান ও চিকিৎসা শেষে গত ৬ মে দেশে ফেরেন তিনি। দেশে ফেরার পর একাধিকবার শারীরিক নানা জটিলতার কারণে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সব মিলিয়ে জীবনের শেষ সময়ে হাসপাতালই যেন হয়ে উঠেছিল তার বাসস্থান।
শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় গত ২৩ নভেম্বর জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। এর আগে ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রওনা দিয়ে গাড়িতে ওঠেই অস্বস্তি বোধ করছিলেন তিনি। বহু বছর ধরেই খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস এবং চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে ইন্তেকাল করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তার মৃত্যুতে বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত (৩১ ডিসেম্বর এবং ১ ও ২ জানুয়ারি) তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। এ ছাড়া আজ বুধবার সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
আমার বার্তা/এমই
