"আত্মশুদ্ধির সফর: রমজান ও ঐক্যের মহিমা"

প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৩:৫৮ | অনলাইন সংস্করণ

  কাজী আরাফাত হোসেন

রমজান মাস আসে বার্ষিক এক আধ্যাত্মিক উৎসবের আমেজ নিয়ে। এটি শুধু একটি মাস নয়, বরং আত্মশুদ্ধির এক মহাসমুদ্র, যেখানে বিশ্বাস, সংযম ও মানবিকতার ঢেউ বয়ে যায়। উপবাস এখানে নিছক ক্ষুধা-তৃষ্ণার নিয়ন্ত্রণ নয়; বরং আত্মার গভীরে লুকিয়ে থাকা লোভ, অহংকার ও হিংসার বিরুদ্ধে এক নীরব সংগ্রাম। এ সময়ে মানুষ নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করে, শুদ্ধতার আলোয় আলোকিত হয়। ব্যক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে এটি সামাজিক সংহতি ও সহমর্মিতার এক অপরিহার্য অধ্যায়। সত্যিকার অর্থে, এটি এক মাসব্যাপী আত্মার স্নান, যা মানুষকে করে নির্মল ও পরিশুদ্ধ। রমজান হলো আধ্যাত্মিক নবজাগরণের উৎস।

* রমজানের মাহাত্ম্য: ইবাদতের মহাসম্মিলন:

রমজান মাস ইসলামী বর্ষপঞ্জির সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও বরকতময় সময়। এটি ইবাদত, ত্যাগ ও আত্মশুদ্ধির মাস। এই মাসে আল্লাহ তাআলা মানবজাতির জন্য অসংখ্য নেয়ামত ও রহমত অবতীর্ণ করেন। রমজান শুধু সিয়াম সাধনার মাসই নয়, এটি ঐশী গ্রন্থাবলির নাজিলেরও মাস। আল্লামা ইবনে কাছির (রহ.) এর বর্ণনা অনুযায়ী, এই মাসেই আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূলদের ওপর তাঁর আসমানী কিতাবসমূহ নাজিল করেছেন। মুসা (আ.)-এর ওপর তাওরাত, দাউদ (আ.)-এর ওপর যবুর, ঈসা (আ.)-এর ওপর ইনজিল এবং সর্বশেষ মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছে এই রমজান মাসেই।  

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:  

*شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْۤ اُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْاٰنُ هُدًي لِّلنَّاسِ وَبَيِّنٰتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِ*  

"রমজান মাস, যাতে কুরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্যপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী।" (সূরা আল-বাকারা, ২:১৮৫)  

এই মাসের শেষ দশকের কোনো এক বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর বা কদরের রাত লুকিয়ে আছে। এই রাত হাজার মাসের ইবাদত থেকে উত্তম। কুরআনে বলা হয়েছে لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ اَلْفِ شَهْرٍ "কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।" (সূরা আল-কদর, ৯৭:৩)  

রমজান মাসে ইবাদতের ফজিলত অপরিসীম। এই মাসে নফল ইবাদত অন্য মাসের ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব লাভের সুযোগ এনে দেয়। আর ফরজ ইবাদতের সওয়াব তো সত্তর গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,  

*"إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ، وَصُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ."*  

"রমজান মাস এলে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয়।" (সহীহ বুখারী: ১৮৯৯, মুসলিম: ১০৭৯)

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা