তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে বৃহত্তম গণসংবর্ধনার প্রস্তুতি
৩০০ ফিটে জনসমুদ্রের অপেক্ষা
প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:৪৭ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দেশের মাটিতে পা রাখছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে। তার এই প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে বলে প্রত্যাশা করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটিয়ে রাজধানীর কুড়িলের ৩০০ ফিট এলাকায় তারেক রহমানকে গণসংবর্ধনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যে সারা দেশ থেকে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। অনুষ্ঠানস্থলের প্রস্তুতিও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের জন্য ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমতি পেয়েছে দলটি।
অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশে আজ থেকেই বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা গেছে। অনুষ্ঠানস্থলের মঞ্চের আশপাশে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। নেতাকর্মীদের মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা গেছে। সারা দেশ থেকে আসা অনেক নেতাকর্মী আজকেই এখানে সমবেত হতে শুরু করবেন বলে জানা গেছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, সংবর্ধনায় অন্তত ৫০ লাখ মানুষের উপস্থিতির প্রত্যাশা করছেন তারা। বিশেষ করে এই আয়োজনের পেছনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের শক্তি প্রদর্শনের লক্ষ্যও রয়েছে। সংবর্ধনা মঞ্চ পরিদর্শন শেষে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সংবর্ধনায় অর্ধকোটি মানুষের উপস্থিতি আশা করছি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারেক রহমানের বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফুটের গণসংবর্ধনা স্থান এবং গুলশান পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, সেদিকে খেয়াল রাখতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংবর্ধনায় অংশ নিতে ইতোমধ্যে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেছেন। আজকের মধ্যে অনেকে চলে আসবেন। তবে ঢাকা ও আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার সকাল সকাল বিমানবন্দর এলাকায় চলে আসবেন।
এছাড়া, ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থী, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থেকে কর্মসূচি সফল করবেন। বৃহস্পতিবার সারা দেশের ১০টি লাইনে চলবে স্পেশাল ট্রেন। কক্সবাজার থেকে পঞ্চগড়, খুলনা থেকে রাজশাহীসহ দেশের প্রায় প্রতিটি প্রান্ত থেকে ঢাকামুখী হচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। রেলওয়ে জানিয়েছে, স্পেশাল ট্রেন ও অতিরিক্ত কোচ সংযোজনের মাধ্যমে আনুমানিক ৩৬ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হবে। তবে নির্বাচনি আচরণবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংবর্ধনায় উপস্থিতির ইতিহাস সৃষ্টি হবে এমনটা দাবি করে বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, সারা দেশের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসী তারেক রহমানকে বরণে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিহাস সৃষ্টি হবে বৃহস্পতিবার। জনসমুদ্রে পরিণত হবে ঢাকা। তিনি বলেন, দিনটি আমরা স্মরণীয় করে রাখতে চাই। আশা করি ঢাকায় অতীতের যেকোনো প্রত্যাবর্তনকে ছাপিয়ে যাবে।
এদিকে, দেশে ফেরার সার্বিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছেন তারেক রহমান। ট্রাভেল পাস হাতে পেয়েছেন তিনি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি ২০২০ ফ্লাইটে টিকিট বুকিং করেছেন তারেক রহমান। ফ্লাইটটি আজ ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে। সব ঠিক থাকলে বোয়িং ৭৮৭-৯ মডেলের উড়োজাহাজটি বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবে। এই ফ্লাইটের বিজনেস ক্লাসে তারেক রহমানের পাশাপাশি আরও পাঁচ সফরসঙ্গীর টিকিট বুকিং দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা জারনাজ রহমান।
জানা গেছে, দেশের ফেরার পর তারেক রহমানকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন দলের শীর্ষ নেতারা। দেশে পৌঁছানোর পর বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাঁর মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে যাবেন। এরপর গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
তারেক রহমানের ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে সরকার। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এর আশপাশ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আজ বুধবার সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা সাধারণ ভিজিটরদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশি পাহারাসহ বিশেষ নিরাপত্তার পাশাপাশি বিএনপির নিজস্ব সিকিউরিটি ফোর্সও কাজ করবে। এছাড়া, বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মাধ্যমে নিরাপত্তার জন্য আবেদন করা হয়েছে। পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলাম।
বিএনপির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন, ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের পর তারেক রহমানকে গ্রেফতার করে তৎকালীন সরকার। ২০০৮ সালে তাকে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার নামে যুক্তরাজ্যে নির্বাসনে পাঠানো হয়। নতুন পরিবেশ-পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে ব্যাপক উদ্দীপনা ও প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের দেশে ফেরা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন তারা।
আমার বার্তা/এমই
