গোপনে কানাডায় পাড়ি জমাচ্ছে

যমুনা অয়েলের তেল চোর সিন্ডিকেট প্রধান হেলাল উদ্দিন

প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:২৮ | অনলাইন সংস্করণ

  মোস্তফা সারোয়ার

১২ ডিসেম্বর ভোর রাত থেকে আত্নগোপনে যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের সদ্য বিদায়ী ডিজিএম অপারেশন, তেল চোর সিন্ডিকেটের প্রধান হেলাল উদ্দিন। তার সেকেন্ড ইন কমান্ড সিবিএ নেতা মুহাম্মদ এয়াকুব গ্রেফতারের পরপরই হেলাল উদ্দিনের চট্টগ্রামস্থ কাতালগন্জ বাড়ীতে অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। সেই  থেকেই পলাতক  হেলাল উদ্দিন। এদিকে আত্মগোপনে থেকেই চট্রগ্রাম মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুর ছোট বোনের জামাই হেলাল উদ্দিন ইতিমধ্যে গোপনে গোপনে কানাডা পাড়ি দেয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে৷ তারই ধারাবাহিকতায় সদ্য বিদায়ী কর্মরত প্রতিষ্ঠান থেকে তার সকল পাওনাদী বুজিয়ে নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ছোট ভাই জালাল উদ্দীন বাদলকে ৷ এমনকি সেটি  অনুমোদনও দিয়েছে যমুনা অয়েল কর্তপক্ষ । নতুন এমডি নিয়োগ দেয়ার ঠিক আগের দিন অর্থাৎ ১৭ ডিসেম্বর  হেলাল উদ্দিনের অনুপস্থিতিতে তার যাবতীয় পাওনা বুজিয়ে দিতে নিজের ভাই বাদলের  নামে অথরাইজড ( দায়িত্ব অর্পনের) আবেদন করেন। সেদিনই  ব্যবস্থাপনা পরিচালকের রুটিন দায়িত্ব পালনকারী বিতর্কিত কর্মকর্তা মো : মাসুদুল ইসলাম তা আবেদন অনুমোদন করে৷ এরফলে হেলাল উদ্দিনের  শ্রমিক অংশীদারত্বের তহবিল ( wpf), গ্রাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ প্রতিষ্ঠানটি হতে  সকল পাওনাদী ছোট ভাই জালাল উদ্দীন বাদল গ্রহন করবে। তবে নতুন এমডি মো: আমির মাসুদ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের আবেদনের বিষয়টি ফের পুনর্বিবেচনায় আনবে এবং তা বাতিল করবে এমনটাই আশা করছে যমুনা অয়েলের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে শুধু যমুনা অয়েলের পাওনাদি নয়, তার শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি বিক্রির দায়িত্বও অর্পণ করেছে তার সহোদরকে । গোপনে যে কোন সময় কানাডা পাড়ি জমাবে , তার আগাম প্রস্তুতি হিসাবেই তিনি  ছোট ভাইয়ের নামে দায়িত্ব অর্পণের কাজটি ছেড়ে ফেলেছেন৷   একাধিক সুত্রে গেছে পুলিশ প্রশাসনের একাধিক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা  এবং শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দের জনৈক ইমিগ্রেশন অফিসারের সাথে দফারফায় দেন দরবার চলছে ছোটো ভাই জালাল উদ্দীন বাদলের সাথে। এদের সাথে লেনদেনের বিষয়টি চুড়ান্ত হলেও তেল চোর সিন্ডিকেট প্রধান  হেলাল পাড়ি জমাবে কানাডায়৷ অবশ্য  আগে থেকেই সেখানে বসবাস করেছে তার ছেলে ও মেয়ে। সেখানে আছে  তার নিজস্ব ফ্ল্যাটও ৷

মাত্র বিশ দিন আগে অর্থ্যাৎ ৩০ নবেম্বর যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ডিজিএম অপারেশন, তেল চোর সিন্ডিকেট প্রধান হেলাল উদ্দিন চাকরি থেকে অবসরে গেছে । বিগত আওয়ামিলীগ সরকারের পুরোটা সময় হেলাল, এয়াকুব, তেল টুটুলের নেতৃত্বেই হাজার হাজার কোটি টাকার তেল চুরির ঘটনা ঘটেছে  প্রতিষ্ঠানটিতে। শুধু তেল চুরি করেই শতশত কোটি টাকার মালিক হয়েছে হেলাল সিন্ডিকেটের সকল সদস্য। সিন্ডিকেট প্রধান হেলাল উদ্দিন  চাকরী জীবনে মালিক হয়েছে নুন্যতম পাঁচশ কোটি টাকার । ইতিমধ্যে দুদকও তার অবৈধ সম্পত্তির খোজে মাঠে নেমেছে। কিন্তু তিনি এরমধ্যে দুদককেও ম্যানেজ করেছে, বিশ্বস্ত সুত্রে এমনটাই জানা গেছে।  চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ শাখার  সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাষ্ট ব্যাংক, ট্রাষ্ট ব্যাংক , ইস্টার্ন ব্যাংক, এইচ এস বি সি ও আইএফ সি ব্যাংক সহ একাধিক ব্যাংকে হেলাল উদ্দিন এবং তার স্ত্রীর নামে রয়েছে একাউন্ট। ইতিমধ্যে তিনি এবং তার স্ত্রী  এই ব্যাংকগুলোর একাউন্ট  থেকে বড় অংকের অর্থ উত্তোলন করেছে । উত্তোলনকৃত অধিকাংশ টাকাই পাঁচার করেছে  ভারতে পলাতক তার সম্বন্ধি সাবেক এমপি ও যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন বাচ্চু  এবং কানাডা প্রবাসী তার ছেলে মেয়ের কাছে ।

প্রতিষ্ঠানটিতে হেলাল উদ্দিন চাকরি করে গেছে  বিরাট  ক্ষমতাধর  হিসেবে।  দীর্ঘ চাকরী জীবনে তার কোন বদলী নেই। ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান তিনি। সহকারী অফিসার পদে  চাকরী স্থায়ী হয় ১৯৯৭ সালের ১লা জানুয়ারী। প্রথমে পোষ্টিং পায় মেইল ইনস্টলেশন পতেঙ্গা টার্মিনাল অফিসের বাল্ক সেকশনে। মুলত যমুনা অয়েলের সবচেয়ে লোভনীয় পোষ্টিং হলো এই সেকশন। বেশী পরিমান তেল চুরি হয় এই সেকশন থেকেই। শুরু থেকে এই পর্যন্ত কখনো পতেঙ্গার টারমিনাল অফিস কিংবা আগ্রাবাদ প্রধান কার্যালয়, ঘুরে ফিরে এই দুই অফিসেই চাকরি করে গেল হেলাল উদ্দিন । অবশ্য একবার বগুড়ায় বদলির অর্ডার হয়েছিল, তবে মুহূর্তের মধ্যে তার সম্বন্ধির ক্ষমতার দাপটে সেই আদেশ স্থগিত হয়ে গেছে। অবশ্য কিছু দিনের জন্য অডিট এ আগ্রাবাদ শাখায় কর্মরত ছিল, কিন্তু ফের এজিএম টার্মিনাল অফিসে পদায়ন করা হয়। ডিজিএম পদে পদোন্নতি পরেও একই সাথে পতেঙ্গা  টার্মিনাল অফিসের এজিএম টার্মিনাল পদে দায়িত্ব পালন করছে । 
 

চাকরি জীবনে মালিক হয়েছে নুন্যতম পাঁচশ কোটি টাকার। নিজে ব্যবহার করে প্রিমিও মডেলের প্রাইভেট কার, যার নাম্বার  চট্টগ্রাম মেট্রো গ ১২- ৫৬১০ এবং স্ত্রীর জন্য আছে  Havel মডেলের একটি জীপ।  কানাডায় রেখে পড়াশোনা করিয়েছে ছেলেকে, বানিয়েছে পাইলট। ছেলের টিউশনি ফি নামে অনেক আগেই  কানাডাতে শত শত কোটি টাকা পাঁচার করার অভিযোগ উঠেছে। সেখানে আছে নিজস্ব ফ্ল্যাটও। বর্তমানে সেই ফ্ল্যাটে থাকছে তার ছেলে ও মেয়ে। কিনেছে মালয়েশিয়াতেও ফ্লাট, সেই ফ্ল্যাটের বর্তমানে ভাড়াটিয়া  সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা আক্তারুজ্জামান বাবুর সহোদর  বদিরুজ্জামানের ছেলে। চট্টগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণপুর্ন  পাঁচলাইশ এলাকার  আনিকা কমিউনিটি সেন্টারের পাশে ৭৭৫/৮৮৫ কাতলগন্জ আসিফ হাউজ নামে পাচ তলা ভবনটির মালিক তিনি । সাত আট বছর আগে পাঁচ কাঠার জায়গার উপর এই বাড়ীটি ক্রয় করেন তিনি । যার বর্তমান বাজার মুল্য দশ কোটি টাকারও বেশি।সম্পাদিত  দলিল রেজেষ্ট্রিও হেলাল উদ্দিনের নিজের  নামে।  বাড়িটির নাম দেয়া হয় তার ছেলে  আসিফের নামে ( আসিফ হাউজ) । বছর পাচেক আগে একই এলাকাতে কাতালগন্জ আবাসিক এলাকার ৪ নং রোডের কালীবাড়ির পাশে 5th কনভেনশন হলের বিপরিত পাশে আট শতাংশ জায়গায় উপর  পাঁচ কোটি বিশ লাখ টাকায় আরেকটি পাঁচতলা বাড়ি কিনেন । বছর দেড়েক আগে সেই বাড়িটি ভেঙে দশতলা ভবন  নির্মান কাজে হাত দেয় ।  অবশ্য গত বছর ৫ আগষ্ট ২০২৪ সালে দেশের পটপরিবর্তনের পর  ভবনের নির্মাণ কাজ সাময়িক বন্ধ ছিল । ইতিমধ্যে ভবনের কাজ ফের  শুরু হয়েছে। রাউজানের সুলতানপুর নিজ গ্রামে নিজেরটা ছাড়াও  একই ডিজাইনে পাঁচ ভাইকে পাঁচটি বাড়ি করে দিয়েছে। নামে বেনামে কিনে রেখেছে শত কোটি টাকার সম্পত্তি।


আমার বার্তা/জেএইচ