মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে ফের সংঘাত শুরু হয়েছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দুই বৈরী প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে। সংঘাতে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৩ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বুধবার আহতরা সবাই কম্বোডিয়ার নাগরিক। থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনীর দাবি, বেশ কয়েক জন থাই নাগরিকও আহত হয়েছেন; তবে আহত নাগরিকদের সংখ্যা জানায়নি থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী।
সংঘাত হয়েছে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী একটি বিবাদপূর্ণ অঞ্চলে। ব্যাংককের দাবি, এ অঞ্চলটি দেশটির সা কায়েও প্রদেশের বান নং ইয়া কায়েও গ্রামের অংশ। অন্যদিকে নমপেনের দাবি, অঞ্চলটি কম্বোডিয়াির বানথায়ে মিনচে প্রদেশের প্রিয়ে চ্যান গ্রামের অন্তর্গত।
এক বিবৃতিতে থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বুধবার স্থানীয় সময় সকালে কম্বোডিয়া থেকে প্রায় ২০০ মানুষ লাঠি এবং পাথর হাতে সীমান্ত পেরিয়ে থাইল্যান্ডের সীমানায় ছুটে আসে এবং সীমান্তরক্ষীদের আক্রমণ করে। এ সময় তাদের থামাতে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারগ্যাস, লাঠি, রবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও দাঙ্গা পুলিশ।
কম্বোডিয়া থেকে আগতদের হামলায় বেশ কয়েকজন সীমান্তরক্ষী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে থাইল্যান্ড।
এদিকে কম্বোডিয়ার তথ্যমন্ত্রী নেথ ফিয়াকত্রা এক বিবৃতিতে এ সংঘাতের জন্য থাইল্যান্ডকে দোষারোপ করে বলেছেন, থাইল্যান্ডের পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী সীমানা পেরিয়ে কম্বোডিয়ায় ভূখণ্ডে প্রবেশ করে গ্রামের বেসামরিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত ইতোমধ্যে সমর্থন চেয়ে কয়েক জন বৈশ্বিক নেতা এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা আসিয়ানে চিঠি দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে সরকারি এক বিবৃতিতে।
প্রসঙ্গত, এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল বা পান্না ত্রিভুজ নামের একটি ভূখণ্ড নিয়ে ১১৮ দ্বন্দ্ব চলছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে। থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের সীমানা মিলিত হয়েছে পান্না ত্রিভুজে। প্রাচীন মন্দির ও ধর্মীয় স্থাপনাসমৃদ্ধ পান্না ত্রিভুজকে থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়া উভয়েই নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে।
এই সংকটের সূত্রপাত গত শতকের প্রথম দিকে। ওই সময় ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল কম্বোডিয়া। ১৯০৭ সালে কম্বোডিয়ার একটি মানচিত্র প্রকাশ করে ফ্রান্স, সেখানে পান্না ত্রিভূজকে কম্বোডীয় ভূখণ্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। থাইল্যান্ড সেই সময়েই এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
পরে ১৯৫৩ সালের ৯ নভেম্বর ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে কম্বোডিয়া। কিন্তু স্বাধীনতার পরও পান্না ত্রিভূজকে নিজেদের দখলে রাখে দেশটির সরকার। ফলে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক আর স্বাভাবিক হয়নি দেশটির।
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সীমান্ত সংঘাতের পর ১৫ বছর আগে যুদ্ধবিরতিতে গিয়েছিল দুই দেশ। কিন্তু গত মে মাসে কম্বোডিয়ার এক সেনা থাই সীমান্তের কাছে নিহত হওয়ার পর ফের উসকে ওঠে উত্তেজনা।
সেই উত্তেজনা প্রশমনের পর গত ২৫ দুই দেশের সীমান্তে ফের সংঘাত শুরু হয়। এতে নিহত হন দুই দেশের অন্তত ১৫ জন নাগরিক এবং আহত হন আরও কমপক্ষে ৪৬ জন।
সূত্র : রয়টার্স
আমার বার্তা/জেএইচ