ই-পেপার শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

অর্থ পাচার বন্ধ হলে উন্নয়ন হবে টেকসই

প্রজ্ঞা দাস:
১৮ মে ২০২৫, ১২:৩০

বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রা এখন আর কেবল দূরের স্বপ্ন নয়; এটি এক জ্বলন্ত বাস্তবতা। যা নতুন অবকাঠামো, রপ্তানির উত্থান, আর উন্নয়ন প্রকল্পের আলোয় প্রতিদিন নিজেকে মেলে ধরছে। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু বা দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো কৃতিত্ব শুধু অতীতের সীমানায় অতিক্রম করেনি বরং ভবিষ্যতের দিকে দৃঢ় পথচলার দুর্বার পদক্ষেপ।কিন্তু এই অগ্রগতির পেছনে যে অর্থের ধারা প্রবাহিত, তার একটি বড় অংশ নিঃশব্দে দেশের বুক থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে, যেন জীবনীশক্তি নিংড়ে বেরিয়ে যাওয়ার মতো। এটি কেবল সম্পদের ক্ষয় নয়, বরং এটি একটি জাতির উন্নয়নের স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দিচ্ছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে প্রতিটি টাকা জনকল্যাণে বিনিয়োগ করা অতীব জরুরি, সেখানে অর্থ পাচারের কারণে সেই টাকায় বিদেশে পাচার হয়ে দেশের জনগণের ভবিষ্যৎকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করছে।বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের প্রধান পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে ট্রেড মিস-ইনভয়েসিং (বাণিজ্যিক চালানে কারচুপি), হাওয়ালা, এবং বিদেশি বিনিয়োগের ছদ্মবেশে অর্থ স্থানান্তর। গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই)-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে,গত দুই দশকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে বিদেশের বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে। এই পরিমাণ অর্থ দেশের বার্ষিক জিডিপির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। সবচেয়ে হতাশার বিষয় হলো ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরেও এই অবৈধভাবে অর্থ পাচারের প্রবণতা কমেনি; বরং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে পাচারের নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে।

এই বিপুল সম্পদ যদি দেশে থাকত শিক্ষাক্ষেত্রে বিপ্লব আসত। হাসপাতালগুলো আধুনিক হতো। গ্রামীণ রাস্তাঘাট উন্নত হতো। দারিদ্র্যের শেকল ভাঙত। দেশের জনগণ একটি উন্নত জীবন পেত।কিন্তু জনগণের সম্পদ লুট করে এই অর্থ সুইস ব্যাংকের গোপন ভল্টে, দুবাইয়ের বিলাসবহুল সম্পত্তিতে, ক্যারিবিয়ান দ্বীপের গোপন হিসাবের খাতায় পাচার হয়েছে। এটি জাতির সম্ভাবনার সঙ্গে বিশাল বিশ্বাসঘাতকতা। এই সম্পদের ক্ষয় অর্থনীতিকে শ্বাসরোধ করছে।

২০২৫ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় সঙ্কুচিত হয়েছে। দুই বছর আগে যেখানে রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার, এখন তা ২৮ বিলিয়নের কাছাকাছি। এই পতনের পেছনে অর্থ পাচার একটি নীরব অপরাধী। দেশের ভেতরে বিনিয়োগের প্রবাহ কমেছে। শিল্পায়নের গতি মন্থর হয়েছে। কর সংগ্রহের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। ফলে সরকারের আয় সীমিত হওয়ায় জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে ব্যয় কমেছে। শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি, কৃষকদের জন্য ভর্তুকি, দরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা এসব এখন সংকটের মুখে পরেছে।এই অর্থের অভাব সরকারকে ক্রমাগত ঋণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ২০২৫ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ১১৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এই ঋণ পরিশোধের জন্য প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বাইরে যাচ্ছে। এটি আমাদের অর্থনীতির স্বাধীনতাকে খর্ব করছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ঋণের শেকল তৈরি করছে। এই পথে চললে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন হবে।

অর্থ পাচারের ধ্বংসলীলা শুধু অর্থনীতিতে সীমাবদ্ধ নয়। এটি সমাজের নৈতিক ভিত্তিকেও আঘাত করছে। যারা এই অপরাধে জড়িত, তারা সমাজের প্রভাবশালী শ্রেণি। তাদের কর্মকাণ্ড সামাজিক বৈষম্যকে তীব্র করছে। ধনী শ্রেণি আরও সম্পদশালী হচ্ছে, যখন সাধারণ মানুষ বেঁচে থাকার জন্য প্রতিমুহূর্তে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছে। এই অসমতা সামাজিক অস্থিরতার বীজ বপন করছে। রাস্তায় অসন্তোষ বাড়ছে। তরুণদের মনে হতাশা জমছে। অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে। এই বিভাজন সমাজের ঐক্যকেও দুর্বল করছে। শুধু তাই নয়, এই অপরাধ দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতা করছে। অবৈধ সম্পদ বিদেশে পাঠানোর সহজলভ্যতা দুর্নীতিবাজদের নির্ভীক করছে।যা সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতাকে ক্ষুণ্ন করছে। জনগণের মনে রাষ্ট্রের প্রতি আস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।এই আস্থার সংকট জাতির অগ্রগতির পথে বড় বাধা।

দুঃখের বিষয় হলো অর্থ পাচার রোধে আইনি কাঠামো আছে, কিন্তু তার কার্যকর বাস্তবায়ন নেই। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ কাগজে শক্তিশালী, কিন্তু বাস্তবে দুর্বল। তদন্ত প্রায়ই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জড়িত থাকার কারণে মামলা এগোচ্ছে না। রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি এই সমস্যাকে জটিল করছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তদারকি অপ্রতুল। ব্যাংকগুলো প্রায়ই অজান্তে বা ইচ্ছাকৃতভাবে পাচারের মাধ্যম হয়ে উঠছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জটিলতা এই লড়াইকে আরও কঠিন করছে। গোপন ব্যাংক হিসাব, ট্যাক্স হেভেন, ডিজিটাল মুদ্রার অপব্যবহার এসব এখন পাচারকারীদের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

তবে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের সময় এখনো চলে যায়নি।কঠোর পদক্ষেপ নিলে অর্থ পাচার বন্ধ করা সম্ভব।তার জন্য আইনের পূর্ণ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধীদের শাস্তি এমন হতে হবে, যেন অন্যরা এই অপরাধ থেকে বিরত থাকে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নজরদারি বাড়াতে হবে। সন্দেহজনক লেনদেন শনাক্তে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। অর্থ পাচার রোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে। বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে মিলে ট্যাক্স হেভেনগুলোর বিরুদ্ধে লড়তে হবে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তরুণদের এই অপরাধের ক্ষতি সম্পর্কে শেখাতে হবে। সর্বোপরি, রাজনৈতিক নেতৃত্ব শূন্য সহনশীলতার নীতি গ্রহণ করবে। কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত থাকলেও তাকে ছাড় দেওয়া যাবে না।

অর্থ পাচার কেবল সরকারের দায়িত্ব নয়। এটি দেশ ও দেশের প্রতিটি নাগরিকের জীবনের সঙ্গে জড়িত। যে সম্পদ পাচার হচ্ছে, তা আমাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য ব্যবহৃত হতে পারত। বয়স্কদের চিকিৎসায় কাজে লাগত। তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি হতো। গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত হতো, দারিদ্র্যের হার কমত, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হতো। তাই পুরো দেশ ও জাতির স্বার্থে অর্থ পাচার রোধে সরকার, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, তরুণ প্রজন্মসহ সর্বস্তরের মানুষকে একযোগে কাজ করতে হবে। তবেই বাংলাদেশের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। অর্থ পাচার বন্ধ হলে প্রতিটি টাকা জনগণের কল্যাণে ব্যয় হবে এবং বাংলাদেশ সত্যিকারের উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, ইডেন মহিলা কলেজ।

আমার বার্তা/জেএইচ

বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের ঝুঁকি ও সুযোগ

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে সৌর ও বায়ুশক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে।

জুড়ীর সাহিত্য সাংবাদিকতা : প্রাচীনকাল থেকে বিজ্ঞান যুগ

পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আাসা জুড়ী নদীকে কেন্দ্র করে জুড়ী জনপদ গঠিত হয়েছে।

রোহিঙ্গা-রাখাইন সহবস্থান নিশ্চিতে আরাকান আর্মিকে উদ্যোগী হতে হবে

বর্তমানে বাংলাদেশ- মিয়ানমার সীমান্ত আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে এবং রাখাইন রাজ্যে তাদের আধিপত্য সুদৃঢ় করতে আরাকান

বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ বায়ুদূষণ

বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ হচ্ছে বায়ুদূষণ, শব্দ দূষণ ও নদী দুষণ ।বায়ু দুষণের-জন্য আমাদের-রাজধানী
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইনস্টাগ্রামে অপরিচিতদের পাঠানো বার্তা বন্ধ করবেন যেভাবে

রাজধানীতে চলছে শান্তিবাড়ির জামদানি প্রদর্শনী

চীনে ৩ লাখ বছরের পুরোনো কাঠের সরঞ্জাম আবিষ্কৃত হয়েছে

দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাচ্ছে বাগেরহাটের ৭শ’ অসহায় মানুষ

বর্তমান অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন কল্পনাও করা যায় না: জামায়াত আমির

শরীয়তপুরে পুনর্বাসনের অনিশ্চয়তায় রয়েছে পদ্মা তীরের আড়াই শতাধিক পরিবার

রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি পালনের সময় পুলিশের বাঁধা

পুলিশের বিশেষ অভিযানে সারা দেশে গ্রেপ্তার ১৪৮৭ জন

যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রথমবার প্রকাশ হচ্ছে বাংলা সংবাদপত্র ‘ক্রিটিক বাংলা’

সিলেটে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার তিন

চট্টগ্রামে অবৈধ অকটেনসহ ১ জন পাচারকারীকে আটক করেছে কোস্ট গার্ড

চবি ইতিহাস বিভাগের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন

নদীবন্দর গুলোতে চলছে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত

বিমানে সহযাত্রীর ওপর হামলায় গ্রেপ্তার ভারতীয় যুবক ইশান শর্মা

গুলিবিদ্ধ ইমরানের চিকিৎসা ও অপারেশন দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

এখন থেকে বাংলাদেশপন্থিরাই দেশ চালাবে: নাহিদ ইসলাম

মৌলিক সংস্কার ছাড়া ভালো নির্বাচন সম্ভব নয়: জামায়াত আমির

ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ গেল আরও এক ফিলিস্তিনি ফুটবলারের

কড়া গোপনীয়তা পালন হবে স্পেনিয়ার্ড বিস্ময়বালক ইয়ামাল এর জন্মদিন

জোতার মৃত্যু শোকের ছায়া নেমে এসেছে ফুটবল বিশ্বে