বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি ও শিক্ষা খাতসহ নানা ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘বিশেষ মর্যাদা’ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এর শিক্ষকরা।
রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের কাছে এই দাবি জানিয়ে একটি স্মারকলিপি জমা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।
৮৩টি বিভাগের স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের বুদ্ধিভিত্তিক দিক নির্দেশনা, রাজপথের নেতৃত্ব এবং সম্মুখসমরে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের অনন্যসাধারণ ভূমিকা সুবিদিত।
নব্বইয়ের সফল স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানসহ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে চালকের আসনে ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। তারই ধারাবাহিকতায় ফ্যাসিবাদী সরকারের জুলুম-নির্যাতন ও রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সূচনা এবং স্বৈরাচারী সরকার উৎখাত করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নবযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরাই ভূমিকা রেখেছেন।’
শিক্ষকেরা আরও বলেন, সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক শতাব্দী ধরে মানবসম্পদ তৈরিতে কাজ করছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি-বেসরকারি, চিকিৎসা, প্রকৌশল, শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক খাতে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সমাজের সব শ্রেণির মানুষের জন্য উচ্চশিক্ষার দরজা উন্মুক্ত রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চমানের শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে, যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশ নামক একটি জাতিরাষ্ট্রের অভ্যুদয়, এর রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রায় এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ঐতিহাসিক অবদান রেখে চলছে। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার অধিকতর বিকাশ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উত্তরোত্তর উন্নতির জন্য একে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করে শিক্ষা ও গবেষণায় বিশেষ বরাদ্দ দান, স্বতন্ত্র বেতন-কাঠামোসহ শিক্ষকদের পেশাগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা সময়ের দাবি।’
স্মারকলিপি দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাদা দল’ নামে পরিচিত জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষকদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে যত গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন হয়েছে সব আন্দোলনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান ছিল অগ্রগামী।
শুধু তাই নয়, শিক্ষা ও গবেষণায়ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এত বড় ভূমিকা রাখার পরও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিশেষ মর্যাদা নেই। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার নজির রয়েছে। আমরা চাই, সরকার এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করবে।’
সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম বলেন, ‘বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতা যুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এবং সর্বশেষ চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যেই এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মাননীয় উপাচার্যকে আমরা অনুরোধ জানাই।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম, স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম এ কাউসার, স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাহবুবা সুলতানা, শামসুন্নাহার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নাসরিন সুলতানা, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল আজিম, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ প্রমুখ।
আমার বার্তা/এল/এমই