দেশের সবচেয়ে বড় ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে।
শনিবার (৭ জুন) সকাল ৯টায় শোলাকিয়ায় ১৯৮তম ঈদের জামাত শুরু হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী, বন্দুকের গুলির মাধ্যমে জামাতের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এতে ইমামতি করেন বড়বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ।
নামাজ শেষে দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনায় মোনাজাত করা হয়।
সকাল ৬টা থেকেই মুসল্লিরা ঈদগাহ মাঠে আসতে শুরু করেন। এ সময় শোলাকিয়া ও আশপাশের এলাকাকে ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তোলা হয়। ঈদগাহে প্রবেশের সময় মুসল্লিদের তিনটি আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে মেটাল ডিটেক্টরে তল্লাশি করে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়।
ঈদুল ফিতরের তুলনায় ঈদুল আজহার জামাতে লোকসমাগম তুলনামূলক কম হয়। কারণ, কোরবানির প্রস্তুতিতে অধিকাংশ মুসল্লি নিজ এলাকায় অবস্থান করেন। তারপরও আশপাশের কয়েক হাজার মানুষ এবার জামাতে অংশ নেন। বৃষ্টির কারণে মাঠ কিছুটা কর্দমাক্ত থাকলেও উৎসবমুখর পরিবেশে জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
২০১৬ সালের ৭ জুলাই শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে এবারও নেয়া হয় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা। সকাল থেকেই মাঠে উপস্থিত ছিল বিজিবি, র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ ও বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল। নিরাপত্তা নজরদারিতে ছিল সিসিটিভি ক্যামেরা ও ড্রোন। স্থাপন করা হয় কয়েকটি ওয়াচ টাওয়ার; শহরের অলিগলিতেও বসানো হয় নিরাপত্তা চৌকি।
মাঠে ছিল সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। নিরাপত্তার পাশাপাশি মাঠে মোতায়েন ছিল ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম। স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে ছিলেন স্কাউট সদস্যরা।
ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) কাজেম উদ্দীন বলেন, “উৎসবমুখর, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ ঈদ জামাত আয়োজন করতেই নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।”
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফোজিয়া খান বলেন, “এবারের জামাত অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। মুসল্লিদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে।”
ঈদের দিন মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ভৈরব ও ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জগামী দুটি বিশেষ ট্রেন চালু ছিল।
শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠটি কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্বদিকে, নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ৭ একর। প্রায় দুই শতাব্দী ধরে এখানে ঈদের বিশাল জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, শোলাকিয়ার সাহেববাড়ির সুফি সৈয়দ আহম্মদ ১৮২৮ সালে তার নিজ জমিতে প্রথম ঈদের জামাতের আয়োজন করেন। প্রথমবারেই সোয়া লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণের কারণে এলাকাটির নাম প্রচলিত হয় 'সোয়ালাখিয়া', যা পরে 'শোলাকিয়া' নাম ধারণ করে।