স্বাধীন বিচারব্যবস্থার সুফল জনগণকে ভোগ করতে হলে আগে উচ্চ ও নিম্ন আদালতকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, ‘উচ্চ এবং নিম্ন আদালতে ফ্যাসিস্টদের বহাল রেখে যতই আমরা স্বাধীন বিচারব্যবস্থা করি না কেন, এর সুবিধাভোগী এরা (ফ্যাসিস্টরাই) হবে। আমাদের পরিষ্কার বক্তব্য, ফ্যাসিস্টমুক্ত হতে হবে উচ্চ এবং নিম্ন আদালত। তারপরে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা সত্যিকার অর্থে কার্যকর হবে।
বৃহস্পতিবার (০৩ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের নবম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলে সালাহউদ্দিন আহমদ।
উচ্চ এবং নিম্ন আদালতকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করার বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমাদের নেতাকর্মী, সাংবাদিকসহ সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে তারা অবৈধভাবে সাজা দিয়েছে। সেই ফ্যাসিস্টদের যেন আমরা রক্ষা না করি, আমরা চাই উচ্চ এবং নিম্ন আদালতে যাতে ফ্যাসিস্টের দোসরেরা না থাকে।
বিএনপির এ স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, এখন যাদের বিরুদ্ধে বদলি, বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এটা যথেষ্ট নয়। তাদের অপরাধের জন্য নির্দিষ্ট করে শুধু চাকরি গেলে হবে না, অপরাধের জন্য তাদের বিচারও করতে হবে। যদি আমরা সেটি নিশ্চিত করতে পারি তাহলে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা কার্যকর হবে, তাছাড়া উচ্চ এবং নিম্ন আদালতে ফ্যাসিস্টদের বহাল রেখে যতই আমরা স্বাধীন বিচারব্যবস্থা করি না কেন, সেটার সুবিধা এরাই ভোগ করবে। এদের মাধ্যমে যদি বিচারব্যবস্থা কার্যকর হয়, যতই আমরা কড়া আইন করি এটার অপব্যবহার তারাই করবে এবং এখনো করছে।
তিনি বলেন, আপনারা দেখবেন, জেলা পর্যায়ে থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যারা দোসর ছিল, যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সব তো ওয়ান/টুতে বেল (জামিন) হয়ে যাচ্ছে। এসব কারা করছে, করছে তো এ ফ্যাসিস্টদের দোসরেরা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনার বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা বিগত সময় দেখেছি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার যথেষ্ট অপব্যবহার হয়েছে। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিসহ বড় বড় অপরাধ করা আসামিদের উপরর্জি ক্ষমা প্রদর্শনের মাধ্যমে হত্যাযজ্ঞের একটা উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। ফলে দেশে এটার মাধ্যমে আলোচনায় আসছে এ ক্ষমতাটা রাষ্ট্রপতির হাতে এভাবে অবারিত থাকা উচিত কিনা। সেই সেন্টিমেন্টের সঙ্গে একমত পোষণ করে, আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির এ ক্ষমতা প্রয়োগের একটা বিধান আনা যায় কিনা এবং আইনি একটা পরামর্শ সভা বা বোর্ড রাখা যায় কিনা, এছাড়া এর সঙ্গে কোনো ইতিমালা প্রণয়ন করা যায় কিনা, কি পদ্ধতি অনুসরণ করেই ক্ষমা প্রদর্শনীর বিষয়টি করা যায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছি, রাষ্ট্রপতির এ ক্ষমতাটা আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।
বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে একমত পোষণ করার বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা এসময়ে এসে সংবিধানে এমন কিছু পরিবর্তন করতে পারবো না, যে পরিবর্তন পরবর্তীতে টিকবে না। সেটা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। এখন যে পর্যায়ে আছি, এখানে জনগণ ও রাষ্ট্রের কাছে আমাদের দায় অনেক বেশি। আমরা এখানেই রাজনৈতিকভাবে মতামত দিচ্ছি না, জনগণের জন্য, দেশের কল্যাণের জন্য সার্বিকভাবে মতামত দিচ্ছি। এখানে কোনোভাবেই রাজনৈতিক বিবেচনা থাকার কথা না।
আমার বার্তা/এমই