মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ফুলহারা আঞ্চলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ও একজন কর্মচারীকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবদল নেতার বিরুদ্ধে। গত ২৯ জুন দুপুরে বিদ্যালয়ের ভেতরেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ঘটনার ভিত্তিতে অভিযোগ দায়ের করা হলেও মামলা গ্রহণে পুলিশের গড়িমসি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২৯ জুন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বড়টিয়া ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক মিনার খানের ছেলে নাবিল খানের সঙ্গে আরেক শিক্ষার্থী রিয়াদ মাহমুদের বাগ্বিতণ্ডা হয়, যা একপর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এরপর নাবিল খান তার বাবা মিনার খানকে বিষয়টি জানালে মিনার খানসহ বেশ কয়েকজন বিদ্যালয়ের ভেতরেই রিয়াদ মাহমুদ ও তার মা ইয়াসমিন আক্তারকে (যিনি ঐ বিদ্যালয়ের কর্মচারী) মারধর করেন। মারধরের সময় শিক্ষার্থী রিয়াদ মাহমুদের ডান হাত ভেঙে যায় এবং ইয়াসমিন আক্তার গুরুতর আঘাত পান। এসময় অভিযুক্তরা ইয়াসমিন আক্তারের গলা থেকে ১৪ আনা ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন ও একটি স্মার্টফোন ছিনিয়ে নেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ইয়াসমিন আক্তার ও তার স্বামী মহির উদ্দিনের অভিযোগ, ঘটনার পর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আইনি সহায়তা মেলেনি। তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরেও সাহায্যের জন্য আবেদন করেছেন।
ইয়াসমিন আক্তার অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করে বলেছেন, "আমরা ওর (মিনারসহ অন্যদের) বিচার চাই। ও যেনো ভবিষ্যতে আর কোনো মানুষের সাথে এমন না করতে পারে। আমরা থানায় অভিযোগও দিয়েছি। কিন্তু আজ এতোদিন পরেও থানা কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। সবাই বলছে আপোস করেন। কিন্তু আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।"
শিক্ষার্থী রিয়াদ মাহমুদের বাবা মহির উদ্দিন জানান, "মিনারের ছেলের সাথে আমার ছেলের একটা বাগ্বিতণ্ডা হয়। এই ঘটনার জের ধরে তারা আমার ছেলে ও স্ত্রীকে মেরেছে। একপর্যায়ে আমার স্ত্রীর গলার চেইন ও একটা টেকনো মোবাইল তারা নিয়ে গেছে।" তিনি আরও বলেন, ম্যানেজিং কমিটি ও প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিয়ে ঘটনার দিনই থানায় অভিযোগ দিয়েছেন, কিন্তু কোনো আইনি ব্যবস্থা পাচ্ছেন না। মহির উদ্দিনের অভিযোগ, অভিযুক্তরা এখন তাদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে এবং বলছে যে চাকরি করতে হলে তাদের কথা মেনে নিতে হবে। তিনি বলেন, "এখন আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। মিনার যুবদল নেতা হওয়ায় থানা এ ব্যাপারে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। আমরা আইনের সহায়তা চাই।"
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লোকমান হোসেন এই ঘটনাকে "সিম্পল ব্যাপার" বলে অভিহিত করেছেন এবং জানিয়েছেন যে তারা বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। তবে জানা গেছে, সভাপতি লোকমান হোসেন অভিযুক্ত মিনার খানের স্বজন।
ঘিওর থানা অফিসার ইনচার্জ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, "এরকম একটা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে থানায়। বিষয়টি তদন্তাধীনও আছে। পরে শুনেছি স্কুল কমিটি বিষয়টি আপোস করতে চেয়েছে। তবে ভুক্তভোগীরা মামলা করতে চাইলে আমরা মামলা নেবো।"
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মিনার খান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, "ঘটনা কিছুই নেই এখানে। অভিযোগটা মিথ্যা করে বানানো হয়েছে। সবাইকে জিজ্ঞেস করবেন আমি ওখানে ছিলাম কি না।"
বিষয়টির উপযুক্ত তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় সুশীল সমাজ।