
সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের বহু মূল্যবোধ রূপ বদলেছে। তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হলো বিবাহ ও দাম্পত্য সম্পর্ক। একসময় যেখানে বিয়ে ছিল পারস্পরিক বিশ্বাস, আত্মিক বন্ধন ও মানবিক সহমর্মিতার প্রতীক- আজ সেখানে প্রাধান্য পাচ্ছে বাহ্যিক সৌন্দর্য, আর্থিক অবস্থান, পেশাগত পরিচয় ও সামাজিক মর্যাদার হিসাব।
বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও আলেম মুফতি ইসমাঈল আহমদ শামীম কাশিমপুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমান সমাজে বিবাহ ক্রমেই একটি প্রদর্শননির্ভর কাঠামোতে রূপ নিচ্ছে। মানুষ এখন জীবনসঙ্গী নির্বাচন করছে হৃদয়ের গভীরতা দিয়ে নয়, বরং চাকচিক্য, সাফল্যের বাহ্যিক চিহ্ন ও তথাকথিত সামাজিক স্ট্যাটাসের ভিত্তিতে। এর ফলে দাম্পত্য আর শান্তির আশ্রয়স্থল না থেকে প্রতিযোগিতা ও প্রত্যাশার চাপের ক্ষেত্র হয়ে উঠছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইসলামের দৃষ্টিতে দাম্পত্য সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো ‘মওদ্দাহ’ ও ‘রহমাহ’- ভালোবাসা ও করুণা। কুরআন যেখানে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে পারস্পরিক প্রশান্তি ও সহানুভূতির বন্ধনে আবদ্ধ করেছে, সেখানে আধুনিক সমাজ সেই মূল দর্শন থেকে অনেকটাই বিচ্যুত।
নবী করিম (সা.) তাঁর হাদিসে বারবার সতর্ক করেছেন বাহ্যিক সৌন্দর্য বা সম্পদের মোহে পড়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিণতি সম্পর্কে। তাঁর শিক্ষা অনুযায়ী প্রকৃত মর্যাদা নির্ধারিত হয় মানুষের চরিত্র, নৈতিকতা ও আল্লাহভীতির মাধ্যমে। আশ্চর্যের বিষয় হলো- আধুনিক মনোবিজ্ঞান ও স্নায়ুবিজ্ঞানও আজ একই সত্যকে বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকার করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘস্থায়ী ও স্থিতিশীল দাম্পত্য গড়ে ওঠে পারস্পরিক সহমর্মিতা, মানসিক নিরাপত্তা ও বিশ্বাসের মাধ্যমে- সাময়িক আকর্ষণ বা ক্ষমতার প্রদর্শনে নয়।
বর্তমানে বিবাহ অনেক ক্ষেত্রে একটি প্রায় চুক্তিভিত্তিক লেনদেনে পরিণত হচ্ছে, যেখানে আবেগ ও মানবিকতার জায়গা দখল করছে হিসাব-নিকাশ ও উপকরণবাদ। অথচ দাম্পত্য মূলত দুই মানুষের সম্মিলিত জীবনযাত্রা- যেখানে ত্যাগ, ধৈর্য, সততা ও আন্তরিকতার মধ্য দিয়েই প্রকৃত সৌন্দর্য বিকশিত হয়।
সমাজ বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে নতুন করে ভাবতে হবে বিবাহের উদ্দেশ্য ও দর্শন নিয়ে। বাহ্যিক চাকচিক্যের মোহ কাটিয়ে হৃদয়ের গভীর মানবিক সংযোগকে গুরুত্ব দেওয়ার মধ্যেই নিহিত রয়েছে সুস্থ পরিবার ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গঠনের পথ।
উল্লেখ্য, মুফতি ইসমাঈল আহমদ শামীম কাশিমপুরী লিবিয়ার তেজি এলাকায় বাইতুর রহমান জামে মসজিদের সাবেক ইমাম ও খতীব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার কেরানীগঞ্জে অবস্থিত বাইতুল হামীদ জামে মসজিদের ইমাম ও খতীব হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন।

