
‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটা রীতিমতো অবান্তর’ বলা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের পদত্যাগের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছেন শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা দেন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ছাত্রদলের এই কর্মসূচিতে সংহতি জানায় গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, অতীশ দীপংকর হল সংসদের ভিপি, ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন ও নারী অঙ্গনের কয়েকজন নেতা।
চবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় চলে সাধারণ জনগণের ট্যাক্সের টাকায়, জামায়াতের টাকায় নয়। গতকাল (রোববার) বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় সহ-উপাচার্য শামীম উদ্দিন খান স্যার পাকিস্তানিদের “যোদ্ধা” বলেছেন। অথচ এই পাকিস্তানি বাহিনী এ দেশের জনগণকে হত্যা করেছে। আমাদের মা-বোনদের ইজ্জত নষ্ট করেছে। তাঁর ওই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ ছাড়া আমরা তালা খুলব না।’
এর আগে গতকাল রোববার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দপ্তরে ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান। এ সময় তিনি ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি অবান্তর’ বলে মন্তব্য করেন।
আলোচনা সভায় অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের দিন নির্ধারিত ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী দেশ থেকে পালানোর জন্য চেষ্টা করছিল, সে সময় তারা জীবিত থাকবে না মৃত থাকবে, সে বিষয়ে কোনো ফয়সালা হয়নি, সে সময় পাকিস্তানি যোদ্ধারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি আমি মনে করি রীতিমতো অবান্তর।’
এ সময় তিনি ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর কী হয়েছিল, তা জানতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করার অনুরোধ করেন।
মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ দেশকে আরেকটা দেশের করদ রাজ্যে পরিণত করার জন্য বুদ্ধিজীবীদের ষড়যন্ত্রমূলক হত্যা করা হয়েছে। আমরা আজ পর্যন্ত জহির রায়হানকে খুঁজে পাইনি। যদি জহির রায়হানকে খুঁজে পাওয়া যেত, সত্যিকার ইতিহাস আমরা পেতাম।’
মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান আরও বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) টিভিতে দেখলাম, মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান (সদ্য জামায়াতে যোগ দেওয়া সাবেক এমপি মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান) বক্তব্য দিচ্ছেন। তাঁকে যখন প্রশ্ন করা হলো যে, “আপনি তো বলতেন, ১৯৭১ সালে লাখ লাখ লোক শাহাদাতবরণ করেছেন। এখন আপনি এর বিপরীত রাজনীতিতে যুক্ত হলেন, এটি কেন?” মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান বললেন, “এগুলো হচ্ছে রেটরিক (আলংকারিক) বক্তব্য। এগুলো তো সত্য নয়।” রেটরিক বক্তব্য আমরা জাতির সামনে শুনতে চাই না। আমরা রিয়্যালিটি চাই। আমরা সত্যিকারভাবে বাংলাদেশে কী ঘটেছিল ১৯৭১ সালে, সেই ঘটনায় কারা কারা শহীদ হয়েছে, সেই তথ্য আমরা জানতে চাই। কারা কারা হত্যা করেছে, সেই তথ্য এখন পর্যন্ত আমাদের জানা হয়নি।’
শামীম উদ্দিন খানের এই বক্তব্যের পরপরই গতকাল রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-মিছিল করে শাখা ছাত্রদল। আজ তাঁর পদত্যাগের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন অব্যাহত থাকতে দেখা যায়।
আমার বার্তা/এমই

