
রাজশাহীর মোহনপুরে কৃষি জমিতে পুকুর খননে বাধা দেওয়ায় জুবায়ের আলী (২৫) নামে এক কৃষককে এক্সকাভেটরে চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার রাত ৯টার দিকে ধুরইল ইউনিয়নের বড় পালশা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জুবায়ের ওই গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ জনতা এক্সকাভেটর মেশিনে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। চালক আব্দুল হামিদকে (২৮) গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বড় পালশা গ্রামের আব্দুল মজিদ মন্জিলের ছেলে আনিসুজ্জামান বকুল এবং মুনতাজ হাজির দুই ছেলে রুহুল আমিন ও রুবেল হোসেন এক্সকাভেটর দিয়ে পুকুর খনন করছিলেন। খবর পেয়ে বুধবার রাত ৯টার দিকে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক তাদের জমিতে পুকুর খনন করতে বাঁধা দেন। এ সময় পুকুর খননকারীরা এক্সকাভেটর মেশিন তাদের উপরে চালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। চালক আব্দুল হামিদ নির্দেশ পেয়ে এক্সকাভেটর চালিয়ে দিলে জুবায়ের নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন।
পরে তাকে উদ্ধার করে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে রাত ১০টার দিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পরে স্থানীয় জনতা চালককে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দিয়েছে। এসময় তারা মেশিনে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন। ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেল নিয়ে গিয়েছিলেন পুকুর খননের উদ্যোক্তা ধুরইল ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান (বকুল)। এলাকাবাসীর তোপের মুখে তিনি মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন তার মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
নিহতের পিতা রফিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বকুল, রুহুল ও রুবেল অবৈধভাবে পুকুর খনন করছিল। জমির মালিকদের সঙ্গে কোনও কথা না বলেই জোর করে আমাদের কৃষি জমিতে পুকুর খনন করছিল। বাধা দিতে গেল এক্সকাভেটর চাপা দিয়ে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা করেছি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ধুরইল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজিম উদ্দিন সরকার জানান, আনিসুজ্জামান এই পুকুর খননের সঙ্গে জড়িত বলে তিনি জেনেছেন। আনিসুজ্জামান বিএনপির ইউনিয়ন কমিটিতে আছেন। তিনি এর আগে আওয়ামী লীগের ভোট করেছেন। এখন আবার বিএনপির ক্ষমতা খাটিয়ে এখানে ধানি জমিতে পুকুর খননে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচার হওয়া উচিত।
ঘটনার পর আনিসুজ্জামান বকুলসহ অন্য অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছেন। আনিসুজ্জামানের ফোন এসময় বন্ধ পাওয়া যাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিমা বিনতে আখতার বলেন, অনুমতি না নিয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে তারা রাতে পুকুর খনন করছিল।
মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মঈনুদ্দীন বলেন, এ ঘটনায় সাতজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। পুলিশ চালককে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যদের আটকের চেষ্টা চলছে। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আমার বার্তা/এমই

