জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, তাপপ্রবাহসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি পরিবার আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বন্যায়। ৫ বছরে দেশে ৫৪.৬৯ শতাংশ পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ক্লাইমেট উইক-২৫ উপলক্ষে এক সেমিনারে এসব তথ্য উঠে আসে।
রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে অবস্থিত দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সেশনে অংশ নেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। বক্তব্য রাখেন– পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. মঞ্জুর হোসেন, বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. সৈয়দ আমির আহমেদ, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিয়ান ব্রিক্স মুলার, ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো ডিয়েস ফেরেস।
দ্বিতীয় অধিবেশনে সিপিডির বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য খুশি কবিরের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আরও বক্তব্য রাখেন- পরিবেশ ও পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ু) জিয়াউল হক প্রমুখ।
সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ফখরুদ্দিন আল কবির তার প্রবন্ধে জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশে যেসব দুর্যোগ হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বন্যার কারণে। ২০১৫-২০২০ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে যেসব দুর্যোগ হয়েছে তার মধ্যে খরায় আক্রান্ত হয়েছে ৪.৭২ শতাংশ পরিবার, জলাবদ্ধতায় ১০.১৬ শতাংশ, ঘূর্ণিঝড়ে ৩৪ শতাংশ, টর্নেডোতে ৫.২৮ শতাংশ, ঝড়/জলোচ্ছ্বাসে ২.২৬ শতাংশ, বজ্রপাতে ১৪.২২ শতাংশ, নদী/উপকূলীয় ক্ষয় ১০.৪, ভূমিধসে ০.৪০ শতাংশ, লবণাক্ততায় ৩.২৭, শিলাবৃষ্টিতে ১৭.৮৩ এবং অন্যান্য খাতে ০.০৯ শতাংশ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সেমিনারে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কপ থেকে ফিরলে সাংবাদিকদের প্রশ্ন আমরা কত টাকা পেলাম বা পাচ্ছি। কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব সমস্যার সমাধান হচ্ছে– টেকনোলজির ব্যবহার।
তিনি বলেন, আমরা এনডিসি ফাইনাল করেছি। যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, কৃষি সবাই গ্রিনহাউজ গ্যাস বাড়াচ্ছে। আমার গণপরিবহন দরকার। অথচ আমাদের শহরের প্রায় সব বাস পুরাতন। মিটিগেশনের কথা বলে যেতেই হবে। ৪০০ কোটি টাকা থাকে বালুর বস্তার জন্য। এটি মোকাবিলায় নতুন কিছু বুদ্ধি দিতে হবে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কপে প্রতিবছর একটা করে নতুন শব্দ ধরিয়ে দেওয়া হয়।
আমরা সেই শব্দের অর্থ ও ব্যাখ্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকি, কাজ করবো কীভাবে।
অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, বিশ্বের ৫০ শতাংশ পুষ্টি সমুদ্র থেকে আসতে পারে। অথচ আমরা সমুদ্রের মাছ খাই না।
তিনি বলেন, বোমা মেরে বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিলেও মিটিগেশনের কিছুই হবে না। আমাদের করতে হবে অ্যাডাপ্টেশন। গত কপে ৩শ’ ট্রিলিয়ন ফান্ডের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ,অথচ আমরা নিজেদের প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করতে পারছি না।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। বাঁধ ভাঙলে কোন প্রতিষ্ঠান ঠিক করবে? এসব নিয়ে ‘হযবরল’ অবস্থা।
টেকনোলজি সম্পর্কে আইনুন নিশাত বলেন, নদীর ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ব্যবহার হয়। এর ভালো কোনো প্রযুক্তি আমরা গ্রহণ করতে পারিনি। এছাড়া রেগুলেটরির টেকনোলজি বদলাতে হবে। কেননা ৯৯ শতাংশ রেগুলেটর কাজ করছে না। টেকনোলজির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয় একটা রিপোর্ট তৈরি করেছিল। এটি কোথায় আছে, সেটি এখন খুঁজতে হবে।
আমার বার্তা/এমই